চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বহির্বিভাগে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন-পুরোনো মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী।
বহির্বিভাগে গত বছর ৩ হাজার ১৩১ জন পুরুষ রোগী চিকিৎসা নেন, এর মধ্যে ২০ শতাংশ গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত। ২ হাজার ৫২০ জন নারী রোগীও চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এছাড়া, অন্তঃবিভাগে ৩ হাজার ১০৮ জন ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে কেমোথেরাপি পেয়েছেন ২ হাজার ৩৩৩ জন, রেডিওথেরাপি পেয়েছেন ৭৭৫ জন এবং ব্র্যাকিথেরাপি পেয়েছেন ৬০০ জন।
ক্যান্সারের বিভিন্ন প্রকারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ জরায়ুমুখের ক্যান্সার, ১৭ শতাংশ খাদ্যনালির ক্যান্সার, ১৫ শতাংশ মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সার এবং ১২ শতাংশ স্তন ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত।
চিকিৎসকদের মতে, বংশগত, পরিবেশগত এবং জীবনাচরণের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে, এবং ত্বক, মুখ, খাদ্যনালী, ফুসফুস, পাকস্থলী, লিভার, স্তন, জরায়ুমুখ, পায়ুপথ ও ব্লাড ক্যান্সারের রোগী সংখ্যা বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালের রোগীরা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নয়, পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী থেকেও আসেন। হাসপাতালে একটি কোবাল্ট রেডিওথেরাপি যন্ত্র রয়েছে, যার মাধ্যমে দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি প্রদান করা হয়। তবে, জরায়ুমুখ ক্যান্সার আক্রান্তদের ব্র্যাকিথেরাপি নিতে হয়, যা সরকারের মাধ্যমে কম খরচে পাওয়া যায়, তবে ঢাকায় এটি বেশি খরচে হয়। এছাড়া, চট্টগ্রামে প্যাট-সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা নেই, যার ফলে রোগীদের পরীক্ষা করতে ঢাকায় যেতে হয়।
চমেক হাসপাতাল এলাকায় ৩০ কাঠা জায়গায় ২ হাজার ৩৮৮ কোটি ২৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার ব্যয়ে একটি নতুন ক্যান্সার ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। ১৫ তলা বিশিষ্ট এই ইউনিটে ১৮০ শয্যা থাকবে এবং আধুনিক সুবিধাসহ রেডিওথেরাপি, ব্র্যাকিথেরাপি, অনকোলজি, সার্জারি সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে এই ইউনিট চালু হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন চট্টগ্রামে সাইক্লোট্রন ও প্যাট-সিটি সুবিধাদি স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা আরও সহজ হবে। সাইক্লোট্রন যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে রেডিওআইসোটোপ উৎপাদন করা যাবে, যা ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ কমাবে।
চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, বর্তমানে হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা ৪৮টি। শিগগিরই নির্মাণাধীন ১৮০ শয্যার বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিট চালু হলে চিকিৎসার সুযোগ আরও বাড়বে এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে।
ইমন/তাপস/নাগরিক
Leave a Reply