চট্টগ্রামের নগরীর ওয়াসা মোড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর ডট গ্যাং নামে পরিচিত একটি গ্রুপের হামলার অভিযোগ উঠেছে।গতকাল সন্ধ্যায় খুলশীর একটি অফিসে বৈঠক চলাকালে এই হামলা চালানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদসহ অন্যান্য সমন্বয়করা।
অভিযোগ অনুযায়ী, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখে ডট গ্যাংয়ের সদস্যরা। নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সাথে জড়িত সাদিক আরমান। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন এবং অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়।
পরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা দাবি করেন, ডট গ্যাংয়ের এই সহিংসতার পেছনে সমন্বয়ক রিজাউর রহমান ও খান তালাত মাহমুদ রাফির প্রশ্রয় রয়েছে। আহত ওমর ফারুক সাগর, তানভীর শরীফসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ডট গ্যাংয়ের সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনের সময় খান তালাত মাহমুদ রাফি ও রিজাউর সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে “ভুয়া ও চাঁদাবাজ” স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই ঘটনার ফলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাসেলের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রিজাউর রহমান এবং ছাত্র আন্দোলনে আহত এক শিক্ষার্থী। এরপর রাফি গিয়ে রাসেলের পাশে বসেন এবং রিজাউর চেয়ারে বসার চেষ্টা করেন।
ওই সময় রাসেলের সাথে থাকা উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘হামলাকারীদের সাথে বসব না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এরই মধ্যে সেখানে রাফির পক্ষে থাকা আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এ সময় উভয়পক্ষ একে অপরকে কটাক্ষ করে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে উভয়পক্ষের কয়েকজন হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিলে উভয়পক্ষ ক্লাবের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সেখানেও তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন।
রাফি–রিজাউর যা বললেন
প্রেসক্লাবের সামনে খান তালাত মাহমুদ রাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। হান্নান ভাই গতকাল রাতে আমাকে কল দিয়ে বলেন, তিনি আজ চট্টগ্রামে আসবেন। সেজন্য এ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করা হয়েছে। তিনটায় যেহেতু কর্মসূচি, সেহেতু আমার ক্যাম্পাস থেকে আসতে দেরি হয়েছে। আমার ওখানে যেতে চারটা বেজে গেছে। যে হামলার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমি জড়িত ছিলাম না। যে বা যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
এরপরই তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নেন রাসেলের অনুসারীরা। তিনি সেখান থেকে প্রেস ক্লাবের নিচে নেমে আসেন।
পরে রাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ও রিজাউরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেগুলো কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমরা কেউ থাকবো না। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। যে নোংরা রাজনীতি চলছে সেটার বন্ধ চাই।’
সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, ‘জিইসি মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলা কারা করেছে? যারাই করছে সে ফুটেজগুলো আমাদের কাছে আসতেছে। আমরা এটা দিব আপনাদের। তারা যে ডট গ্যাং বলে বলে আন্দোলনকারীদের মারার কালচার তৈরি করতেছে; আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম বলেন, ‘চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের দুপক্ষে ঝামেলা হয়েছে। প্রথমে খুলশী থানা এলাকায় তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর রাসেল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে রাফির পক্ষ আসলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
Leave a Reply