“ভাঙনরোধে ভয়াবহ অনিয়ম: পাউবো প্রকৌশলী–ঠিকাদার আঁতাতেই ধসে জিও ব্যাগ–ব্লক”
“জনগণের টাকা পানিতে: পাউবো প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ”
“কর্ণফুলীতে ভাঙন বাড়ছে, প্রশ্নবিদ্ধ পাউবো: প্রকৌশলী–ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের পাহাড়”
“নিম্নমানের কাজ, লবণবালুর ব্লক: পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ”
“১৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পে কারসাজি? পাউবো প্রকৌশলী ও অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুঙ্গে”
রাঙামাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চলমান প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম, নিম্নমানের কাজ এবং তদারকির ঘাটতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘুষ–দুর্নীতি, ঠিকাদারি প্রভাব এবং দায়িত্বশীল প্রকৌশলীদের উদাসীনতা পুরো কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা এবং তাঁর অধীনস্থ একাধিক প্রকৌশলী দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধা নিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য—প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোতে সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদাররা ইচ্ছেমতো নিম্নমানের কাজ করছে।
এদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক এলাকায় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী, অপর্যাপ্ত কাজ, এবং ম্যানেজমেন্টের প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে কাজ আদায়—এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, “পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ম্যানেজ করেই ঠিকাদার যা ইচ্ছে তাই করছে।”
সূত্রে জানা যায় ,
কর্ণফুলী নদী ও আশপাশের খালে ভাঙনরোধ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের কাজ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তদারকির ঘাটতির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি—লবণপানির বালু ও নুড়িপাথর দিয়ে ব্লক তৈরি, অল্পদিনে ধসে পড়া জিও ব্যাগ, এবং জনবসতি এলাকায় কাজের অগ্রাধিকার না দেওয়াই ভাঙন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্পে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে এবং সর্বশেষ ১৫ দিন আগেও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তবে সরেজমিনে বোয়ালখালী খালের ননাইয়ারমার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পূর্বে ফেলা জিও ব্যাগগুলো ধসে তছনছ হয়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমেও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নতুন করে ফেলা বালুর বস্তার কোনো অস্তিত্বও সেখানে দেখা যায়নি।
গত জুলাই মাসে ভাঙন তীব্র হলে এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু চার মাস ব্যবধানে সেগুলো দেবে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের অভিযোগ—“পানির টাকা পানিতে যাচ্ছে, অথচ সুরক্ষা পাচ্ছে না মানুষের ঘরবাড়ি।” তাদের দাবি, জনবসতি রক্ষার চেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পত্তি রক্ষায় পাউবো এবং ঠিকাদাররা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
২০২৪ সালের ২৭ মে কর্ণফুলী নদী ও বিভিন্ন খালের ভাঙনরোধে ১৩৪ কোটি ৯ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। ৬টি ইউনিয়নে মোট ৬.৪৭০ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের অংশ হিসেবে ২৮টি স্থানে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক বসানোর কথা। ১০ ভাগে কাজ ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে বড় চারটি প্যাকেজে ৫৭ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে মেসার্স এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মালিক খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, যাকে ঘিরে অতীতেও নানা বিতর্ক ছিল।
স্থানীয় তিন বাসিন্দা জানান, ব্লকের কাজে লবণপানির বালু ব্যবহার হওয়ায় ব্লক দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবি, পাউবোর যথাযথ তদারকি না থাকায় ঠিকাদারেরা নিজেদের মতো করে নিম্নমানের কাজ করছে।
পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহীন বাদশা বলেন, “সব ঠিকাদার ব্লক তৈরির কাজ শুরু করেছে। ব্লক তৈরি শেষ হলে ডাম্পিং হবে। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।”
অভিযোগগুলো নিয়ে ব্যাখ্যা জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, “আমি মাত্র ফ্লাইট থেকে নামছি”, এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে ফোন করা হলেও তিনি আর কোনো জবাব দেননি।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্পের অগ্রগতি, ব্যয় ও কাজের মান নিয়ে একটি স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি। তারা মনে করেন, সঠিক তদন্ত হলে “অভিযোগের পাহাড়” উঠে আসবে।
প্রিয় পাঠক—নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা ও রাঙামাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চলমান প্রকল্পগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির এক্সক্লুসিভ খবর আগামী পর্বে দেখুন…।