সেই সঙ্গে জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার আগে ইরান যে অবস্থানে ছিল, তা থেকে তেহরান সরবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন খারাজি।
তেহরান থেকে সিএনএনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রথম পদক্ষেপ তাদেরকেই নিতে হবে এবং দেখাতে হবে যে, আমরা যে শর্ত দিয়েছি তাতে তারা আমাদের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং এটা হতে হবে সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা এবং আলোচনার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এজেন্ডা আগে থেকেই প্রস্তুত করা হবে। দুর্ভাগ্যবশত, প্রেসিডেন্ট (ডনাল্ড) ট্রাম্প কূটনৈতিক আলোচনায় বিশ্বাস করেন না বরং লক্ষ্য অর্জনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে পছন্দ করেন।’
সাক্ষাৎকারে খারাজি জানান, জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পর থেকে ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে ইরানের শর্তগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি আরও জানান, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত আছে এবং থাকবে। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং চিকিৎসার জন্য জ্বালানির প্রয়োজন।
খারাজি আরও বলেন, তেহরানের ক্রমবর্ধমান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে থাকবে। তার কথায়, ‘আমরা কেবল পারমাণবিক বিষয় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করব।’
পরমাণু বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু আলোচনার মাঝখানে জুন মাসে ইসরাইল ইরানে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে এবং ওয়াশিংটনকেও এতে টেনে আনে। এক পর্যায়ে মার্কিন বাহিনীও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যেটা ছিল ইরানের ভেতরে প্রথম সরাসরি মার্কিন আক্রমণ।
প্রায় পাঁচ মাস পরেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন এখনও শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন খারাজি। গত রোববার (১৬ নভেম্বর) ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদেহ সিএনএনকে বলেন যে ‘অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও ভবন’-এর গুরুতর ক্ষতি হলেও পারমাণবিক কর্মসূচি ‘অক্ষত’ রয়েছে।
তবে একইদিন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, আক্রমণের শিকার হওয়ায় ‘এই মুহূর্তে’ কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, তার দেশে কোনো ‘গোপন’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নেই। সব পরমাণু আহরণ ও সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার নজরদারিতে আছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন তিনি।
গত এপ্রিলে শুরু হওয়া ইরান-মার্কিন আলোচনার সময় ওয়াশিংটন জোর দাবি ছিল, ইরানকে তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তেহরান অভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার বিষয়ে অনড় ছিল। সেই সঙ্গে তারা কথা দিয়েছিল যে, পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে এমন মাত্রা পর্যন্ত সমৃদ্ধ করবে না।
সাক্ষাৎকারে খারাজি বলেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে নয়, সমৃদ্ধকরণের মাত্রা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্ভাব্য আলোচনার মূল্য আলোচ্য।’ ইরান যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের সাথে আরেকটি সংঘাতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছুই সম্ভব। তবে আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।’