চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়ম, প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয়, নকশার পরিবর্তন এবং কাজের পরিমাণে অনিয়ম, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার-প্রকৌশলীর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রতিটি প্রকল্পে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যে ও যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই প্রকৌশলীর। পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সর্বত্র লুটপাট করে যাচ্ছেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলার পাউবোর প্রতিটি প্রকল্পে তার নির্ধারিত কমিশন আর লাগামহীন ঘুষে তিনি কুমির বনে গেছেন, হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। ফ্যাসিবাদের দোসর হয়েও এখনো তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে?
অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের দায়িত্বে থেকেই মৌচাকের মধু খাচ্ছেন এই প্রকৌশলী। কৌশলে অর্থ আত্মসাৎ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা। কাজ না করে টাকা উত্তােলনেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এত এত অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। সকালের-সময়ের অনুসন্ধানের বেরিয়ে এসেছে তার একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি চিত্র।
সূত্র জানায়, এই নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন পুরো মাত্রায় একজন স্বৈরাচারের দোসর। তিনি একাধারে ছিলেন দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর কর্মকর্তা। একাধিক তথ্য মতে, পাউবোর ২০২৩-২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের চট্টগ্রাম জেলার প্রায় সবকটি নদী খনন ও বাধঁ প্রকল্পের অর্ধেকের কাজের আগেই তোলা হয়েছে বিল। বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার আগেই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আউটসোর্সিংয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগেও স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন সেচ ক্যানেল (জমি) লিজ দেওয়া বন্ধ থাকার পরও মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। এবং মোটা অংকের মাসিক মাসোহারা দিয়ে উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনঃরায় দখল করে নিচ্ছেন দখলদাররা এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে ভূক্তভোগী ঠিকাদাররা জানান, টেন্ডার সাবমিটে তাদের কোনো প্রবলেম নেই। টেন্ডার ক্যাপাসিটি থাকে ভালো। টেন্ডারে যা যা চাওয়া হয় সম্পূর্ণ শর্ত মোতাবেক আমরা সাবমিট করি। আমাদের কাছ থেকে এই প্রকৌশলী বিভিন্ন অজুহাতে কমিশন চায় মোটা অঙ্কের। তার চাহিদা মতো রাজি না হলে আমাদের টেন্ডার দেয়া হয়না। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এই প্রকৌশলী একজন প্রচন্ড ধৃত্য প্রকৃতির মানুষ, তার সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। দেশের জনগণ ও সরকারের কথা না ভেবে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কমিশন বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। লুটেপুটে খাচ্ছেন পাউবো’র প্রকল্পের টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদী খনন প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের আগেই ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঠিকাদারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নেন কাজ দেওয়ার কথা বলে। নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে নিজে যোগাযোগ করে টাকা নেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে চাপ দিয়েও টাকা আদায় করেন তিনি।
পাউবোর একাধিক কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, টেন্ডার টেম্পারিংসহ অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কমিশনের জন্য গুরুতর অসদাচরণ তার নিত্যদিনের কাজ। এছাড়াও সহকর্মীদের সঙ্গে বজায় রাখছে না শ্রদ্ধাচার। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারী ও ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৌশলী শওকতের প্রভাব আর ক্ষমতার কারণে চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাই না।
সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিজ এলাকাল নামে-বেনামে জায়গা-জমি, বাগান বাড়ী, শহরে একাধিক ফ্ল্যাট কিনছেন। আত্মীয় স্বজনের নামে আছে ব্যাংকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এবিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমি মনে করি মাঠ পর্যায়ের পাউবো বা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ঠেকাতে না পারলে সরকারের পরিকল্পনা ও প্রকল্পের কাজগুলো ভেস্তে যাবে। তাই এখনই সময় যথাযথ সরকারি প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুর্নীতিগ্রস্থ এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের আরো নজরদারি দরকার।
অনিয়ম-দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকালের সময়কে বলেন, এইসব মিথ্যা অভিযোগ।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবোর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাপাউবো’র কোনো প্রকৌশলী দুর্নীতি ও প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য করার সুযোগ নেই। কোনো কর্মকর্তারাই আইনের উর্দ্ধে নয়। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।