চট্টগ্রাম ব্যুরো :চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পদুয়া এ.সি.এম. উচ্চ বিদ্যালয়-এর পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন এনামুল হক এনাম। তবে তার অতীত কর্মকাণ্ডকে ঘিরে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভ।
এনামের বিরুদ্ধে আরও নানা গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সাবেক সরকার আমলে প্রভাবশালী এমপি ও মন্ত্রিসভা সদস্যদের পাশাপাশি কুখ্যাত মাদক কারবারিদের ছত্রছায়ায় তিনি এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেন এবং নিরীহ মানুষদের নানাভাবে হয়রানি করতেন। বিশেষ করে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী, এমএ মোতালেব ও ইয়াবা ডন হিসেবে পরিচিত আবদুর রহমান বদীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে জড়িত ছিলেন। এর পাশাপাশি, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি আসিফের ছত্রছায়ায় তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন ভোটকেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কায়দার অনিয়মে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার এই কর্মকাণ্ডের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছিল।”
স্থানীয়দের দাবি, এনামুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এমন একজন মামলাজড়িত ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি করা শিক্ষার পরিবেশকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় নাগরিক জসিম উদ্দিন বলেন
“আমরা বহু বছর ধরে দেখছি এনামুল হক কীভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন। সাবেক সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতেন। বড় বড় নেতা ও মাদক কারবারিদের সঙ্গে ছবি তুলে তিনি তা প্রভাব খাটানোর হাতিয়ার বানাতেন। আমাদের সন্তানরা যে বিদ্যালয়ে আলোর পথে হাঁটার শিক্ষা নেবে, সেখানে যদি অতীতে অন্যায়-অবিচারের ইতিহাস থাকা কেউ সভাপতি হন, তাহলে তারা কী শিখবে? এটা আমাদের জন্য গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়। আমরা চাই দ্রুত এই নিয়োগ বাতিল হোক।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আরেক অভিভাবক বলেন “বিদ্যালয় হচ্ছে আগামী প্রজন্মের জ্ঞানের কেন্দ্র। এখানে যদি এমন একজনকে সভাপতি করা হয়, যার বিরুদ্ধে অতীতে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তবে শিক্ষার্থীরা ভুল বার্তা পাবে। আমরা চাই একজন শিক্ষানুরাগী, পরিষ্কার ভাবমূর্তির মানুষ বিদ্যালয়ের নেতৃত্বে আসুন। এনামুল হকের মতো বিতর্কিত কাউকে বসানো মানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া।”
অভিযোগের বিষয়ে সভাপতি পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এনামুল হক বলেন “আমাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হেয় করার জন্য মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। আমি জীবনে কখনো কারও ক্ষতি করিনি। বরং সব সময় সমাজের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। আমাকে নিয়ে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি চাই বিদ্যালয়ের উন্নয়ন হোক, শিক্ষার্থীরা ভালো পরিবেশ পাক এবং এ প্রতিষ্ঠানটি যেন এলাকার গৌরব হয়ে ওঠে। প্রতিপক্ষরা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।”
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট বিদ্যালয়টির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বর্তমানে পদুয়া এলাকায় চলছে উত্তেজনা ও তীব্র সমালোচনা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে সভাপতির পদে সাধারণত একটি চেয়ারই থাকে। তবে এই চেয়ারের জন্য অনেকেই প্রার্থী হন, যার কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সম্প্রতি সভাপতি হিসেবে এনামুল হককে নিযুক্ত করার ব্যাপারে বোর্ডে ধর্মীয় উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে দুইবার ফোন করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে চ একজন উপদেষ্টার পরামর্শের, বাইরে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বোর্ডের দায়িত্বশীল পদে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কেবল প্রক্রিয়ার সঠিকতা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং সকল পক্ষের আস্থা রক্ষা করার জন্যও অপরিহার্য।
অভিভাবকদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে বসানো মানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া। তারা দ্রুত এ নিয়োগ বাতিল করে একজন স্বচ্ছ ও শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিকে সভাপতি করার দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply