চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে প্রার্থী তালিকা ঘিরে দলে নতুন করে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংগঠনের ভেতরে ক্ষোভ, সন্দেহ ও ভাঙনের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। বিশেষ করে তালিকায় জাকির হোসেনের নাম ওঠার পর থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেন অতীতে বিএনপির সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সম্পৃক্ত ছিলেন না। বরং তার রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ছবিতে দেখা গেছে—ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে রাতের ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত নেতাদের সঙ্গেও তিনি ঘনিষ্ঠভাবে অবস্থান করেছেন। এ কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ও অতীতে অন্য দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা একজন কীভাবে আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন পেলেন?
স্থানীয় যুবদল কর্মী রিদুয়ান এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ত্যাগীরা যদি দলে সুযোগ না পায়, তাহলে সুবিধাবাদীরা দলের ক্ষতি করবে। আমরা ইতিমধ্যে শুনেছি আওয়ামী লীগের দোসর জাকির হোসেনকে কমিটিতে রাখা হচ্ছে। এই প্রহসন আমরা মেনে নেব না।”
একই সুরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আরেক যুবদল কর্মী জাকির। তিনি বলেন, “যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিল, পুলিশি নির্যাতন সহ্য করেছে, মামলার আসামি হয়ে ঘরছাড়া ছিল, তাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিলে সংগঠন ভেতর থেকেই দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে নেতাকর্মীদের আস্থা নষ্ট হবে এবং আন্দোলনের শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।”
প্রার্থী তালিকা ঘিরে এই বিরোধ এখন আর শুধুমাত্র চান্দগাঁও থানার ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই। বিষয়টি জেলা পর্যায়ের নেতাদের কানেও পৌঁছেছে। স্থানীয় নেতাদের আশঙ্কা, এমন সিদ্ধান্ত যদি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গৃহীত হয়, তাহলে শুধুমাত্র চান্দগাঁও নয়, পুরো চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির মধ্যে অবিশ্বাস ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির মতো একটি আন্দোলনমুখী দলে দীর্ঘদিনের ত্যাগীদের উপেক্ষা করে নতুন ও বিতর্কিত মুখকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে তা সংগঠনের জন্য আত্মঘাতী হবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সাফায়েত উল্লাহ মেহেদী বলেন, “দীর্ঘ আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিলেন, তারা যদি অবমূল্যায়িত হন, তাহলে দলে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার আওয়ামী লীগপন্থী সন্দেহভাজন কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হলে বিএনপির রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক ইতিহাস, অতীত ভূমিকা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি।”
বিএনপির ভেতরে আরেকটি মতামত হলো, প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু বর্তমান জনপ্রিয়তা নয়, বরং অতীত রাজনৈতিক সংগ্রাম, মামলার ইতিহাস, নেতাকর্মীদের সঙ্গে মেলবন্ধন এবং আদর্শিক অবস্থান বিবেচনায় নেওয়া উচিত। না হলে সংগঠনে এমন একটি বার্তা যাবে যে, দীর্ঘদিনের সংগ্রাম বৃথা, আর সুবিধাবাদী বা ভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরাই শেষ পর্যন্ত পুরস্কৃত হচ্ছে।
চান্দগাঁও থানার অনেক নেতাকর্মী এখনো আশাবাদী যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে প্রার্থীদের রাজনৈতিক ইতিহাস যাচাই-বাছাই করা হবে। তারা মনে করছেন, যোগ্যতা, ত্যাগ ও আন্দোলনমুখী ভূমিকার ভিত্তিতে যদি প্রার্থী নির্বাচন করা হয়, তাহলে দলীয় ঐক্য অক্ষুণ্ণ থাকবে। অন্যথায়, ভেতরের ক্ষোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করবে এবং বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
Leave a Reply