আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা নিয়ে চট্টগ্রামে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে বিএনপি ১০টি আসনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নতুন ও পুরনো নেতাদের সমন্বয়ে তালিকায় স্থান পেয়েছেন ফটিকছড়ি থেকে সরোয়ার আলমগীর, সীতাকুণ্ড থেকে কাজী সালাউদ্দিন, হাটহাজারী থেকে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং বাঁশখালী থেকে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। পুরনো নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মীরসরাই থেকে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চান্দগাঁও-বোয়ালখালী থেকে এরশাদ উল্লাহ, খুলশী-পাহাড়তলী থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পটিয়া থেকে এনামুল হক এনাম এবং আনোয়ারা-কর্ণফুলী থেকে সরোয়ার জামাল নিজাম। বাকি ৬টি আসন এখনও ফাঁকা রাখা হয়েছে।
নতুন প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দলের অভ্যন্তরে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা জানান, তারা দলের নির্দেশনা অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয়ের জন্য কাজ করবেন। জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতারা যোগ করেন, সকল বিভক্তি ভুলে দলের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, যারা দলের সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।
কিন্তু মনোনয়ন না পাওয়া নেতা–সমর্থকদের মধ্যে অশান্তি দেখা দেয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন মো. আসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা সোমবার রাতের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। ভাটিয়ারী এলাকায় তারা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ চালান। অবরোধ প্রায় চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়, ফলে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। যাত্রী ও গাড়িচালকদের মধ্যে চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়।
এই ঘটনায় বিএনপি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। মধ্যরাতে চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন মনি, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, সীতাকুণ্ড পৌরসভার আহ্বায়ক মামুন এবং যুবদলের সোনাইছড়ির সাধারণ সম্পাদক মমিন উদ্দিন মিন্টু।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এর সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তারা নানাবিধ জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন এবং দলীয় নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। দল মনে করিয়েছে, বাকি আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত হলে দলের সকল সদস্য ঐ প্রার্থীর পক্ষে একত্রিতভাবে কাজ করবেন।
বিএনপির অভ্যন্তরে এই ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মনোনয়ন বঞ্চনার ফলে দলের অভ্যন্তরে বিরোধ এবং অশান্তি বৃদ্ধিপেতে পারে। তবে জেলা ও মহানগর নেতারা একত্রিতভাবে কাজের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
মনোনয়ন পাওয়া নতুন প্রার্থী সরোয়ার আলমগীর বলেন, “দলের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষ বিজয়ের জন্য কাজ করব। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একসাথে প্রচারণা চালাব।” দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া যোগ করেন, “সকল বিভক্তি ভুলে দলীয় স্বার্থে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দলের প্রতি নিষ্ঠা দেখানো যারা অব্যাহত রাখবেন, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে।”
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিও জানিয়েছে, নগরের বাকি দুটি আসনের প্রার্থী ঘোষণার পর যাকে দল যোগ্য মনে করবে, তার পক্ষে সকলেই কাজ করবেন। বিএনপি অভ্যন্তরে অশান্তি রোধ ও একতার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে।