চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ডাঃ খোরশীদা শিরিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
আলমগীর চৌধুরী তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি প্রকল্পের বাজেট থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অন্তত ৮টি ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন এবং বেশ কিছু জমির মালিক হয়েছেন।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের (সিটি করপোরেশন এলাকা) সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় ৪ দশমিক ৩৪ কাঠা এবং ঢাকার পূর্বাচলে ৭ দশমিক ৫ কাঠার দুটি প্লট আছে তার। সুগন্ধার প্লটটিতে তিনি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্লটের তথ্য গোপন করে আলমগীরের স্ত্রী খুরশীদা শিরিন সিডিএ থেকে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় ৪ দশমিক ২৫ কাঠা এবং রাজউক থেকে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় ৫ কাঠার প্লট নেন। ঢাকার উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে ৭ তলাবিশিষ্ট ২০ নম্বর বাড়িটি আলমগীরের স্ত্রী খুরশীদার বলে জানতে পারে দুদক। দুদকে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব আলমগীর দিয়েছেন তাতে চট্টগ্রামের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ৬ তলা ভবন ও গ্রামের দ্বিতল ভবন নির্মাণের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে কম দেখিয়েছেন বলে মনে হয়েছে দুদকের কাছে। ধানমন্ডি ৪/এ রোডের ৫০ নম্বর ভবনটিতে ২ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে তার। এছাড়া বনানী মডেল টাউনের ৭/বি সড়কের এইচ ব্লকে ৪০ নম্বর বাড়ির এ-৮ ফ্ল্যাটটি তিনি কিনেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে দুদক। আলমগীর এটি কেনার দাম দেখিয়েছেন ৬২ লাখ ২৭ হাজার টাকা যা নিয়ে সন্দেহ দুদকের।
আলমগীর চৌধুরী একা নয়, তার স্ত্রীও এই দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলমগীর চৌধুরী দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে এই সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট, জমি এবং ব্যাংক হিসাবের তথ্য মিলেছে, যা তাদের প্রকৃত আয় এবং সম্পদের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
আলমগীর হোসেনের স্ত্রী ডাঃ খোরশীদা শিরিনের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার উত্তরপত্রে নম্বর পরিবর্তন করে এবং ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এতে করে যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েন এবং অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে যায়। একাধিক নিয়োগ পরীক্ষায় এই ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিটি নিয়োগে গড়ে ১০-১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা আলমগীর চৌধুরী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু বিষয়টি জটিল এবং বহু ধরনের প্রমাণের প্রয়োজন, তাই তদন্তের জন্য আরো সময় লাগছে। আমরা সর্বদা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমাদের অনুসন্ধান সঠিকভাবে এবং আইনগতভাবে সম্পন্ন হবে, যাতে কোনো নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি অবিচার না হয়। যেকোনো ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমন আমাদের অগ্রাধিকার এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এই দুর্নীতির ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই দাবি জানিয়েছেন, দ্রুত তদন্ত শেষ করে এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে উদ্বিগ্ন যে, এ ধরনের দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে এবং তাদের শিক্ষার মানের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
Leave a Reply