নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন এলাকার বেসরকারি “নাগরিক হাসপাতাল”-এর বিরুদ্ধে মাত্র পাঁচ দিনের চিকিৎসার জন্য এক শিশু রোগীর কাছ থেকে অস্বাভাবিক পরিমাণ বিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেড ভাড়া ১৫ হাজার, সার্ভিস চার্জ ১০ হাজার ও অক্সিজেন বাবদ ১০ হাজারসহ মোট ৫৬ হাজার টাকা বিল ধরেছে।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “রোগী নয়, যেন ডাকাতি হচ্ছে হাসপাতালের নামে!” অনেকে লিখেছেন, “ডাকাতিরও একটা সীমা থাকা দরকার।”
অভিযোগকারী মুহিব্বুল্লাহ মুহিব জানান, তার শিশু সন্তানকে সামান্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রথম দিকে ডাক্তার ও স্টাফদের ব্যবহার ভালো থাকলেও বিল পরিশোধের সময় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তিনি বলেন, পাঁচ দিনের চিকিৎসার জন্য ৫৬ হাজার টাকার বিল ধরা হয়েছে, যেখানে সরকারি হাসপাতালে একই চিকিৎসা এক তৃতীয়াংশ খরচেই সম্ভব। তার ভাষায়, “এটা সরাসরি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
মুহিব আরও বলেন, বিলের কপি হাতে পেয়ে তিনি হতবাক হয়েছেন। সন্তানকে প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য অক্সিজেন দেওয়া হলেও অক্সিজেন বাবদ ১০ হাজার টাকা চার্জ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। সেই সঙ্গে তিনি আহ্বান জানান, যেন ভবিষ্যতে কোনো সাধারণ মানুষ এমন বাণিজ্যিক আচরণের শিকার না হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ক্ষোভ
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল করিম বলেন, তাদের হাসপাতালে বিল নির্ধারণ হয় নির্দিষ্ট রেট চার্ট অনুযায়ী। প্রতিটি রোগীর অবস্থা ও ব্যবহৃত সেবার ওপর ভিত্তি করে খরচের পার্থক্য হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট শিশুর চিকিৎসায় অক্সিজেন, মনিটরিং এবং অতিরিক্ত সেবার প্রয়োজন ছিল বলেই বিল কিছুটা বেশি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। যদি কোথাও কোনো ভুল বা বাড়তি চার্জ হয়ে থাকে, সেটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানবাধিকার আইনজীবী ও সুশাসন কর্মী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, একজন অভিভাবকের অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ানোর সময়ই সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্ত। আর সেই সময়ে যদি হাসপাতাল অতিরিক্ত বিলের নামে অর্থ আদায় করে, সেটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। স্বাস্থ্যসেবা কোনো পণ্য নয়, এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের নাগরিক হাসপাতালের এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত করা উচিত। শুধু দায় স্বীকার করলেই হবে না, যারা এমন বাণিজ্যিক আচরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় মানুষ বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি আস্থা হারাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় অনেক হাসপাতাল সুযোগ নিচ্ছে অসহায় রোগীদের দুরবস্থার। তারা দাবি করেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ যেন অবিলম্বে এ ধরনের হাসপাতালের বিল কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেয়।