1. admin@nagoriknewsbd.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ অপরাহ্ন

‘ছাত্র-জনতার’ গ্রুপে ঘোষণা, গানের তালে গণপিটুনি

  • বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩১ গননা করুন

‘একজনকে ধরা হয়েছে যিনি মোবাইল চোর বা ছিনতাইকারী। তাকে মারতে হবে সবাই আসেন।’— ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এমন ঘোষণা। এরপর দলে দলে এসে গানের তালে পেটানো হয় শাহাদাত নামে এক যুবককে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ‘গানের তালে তালে হত্যার’ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাাম নগর পুলিশ। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন।

গ্রুপের নেতৃত্বে ভাসমান ব্যবসায়ী, সেখানেই মারতে আসার ঘোষণা

সরকার পতনের পর ভাসমান ব্যবসায়ী ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল তৈরি করেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেটির নাম দেন ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’। সেই গ্রুপের সদস্য ১৩০ জন। জুয়েল তার পরিচিত সার্কেলের মানুষদের ওই গ্রুপটিতে যুক্ত করেন।

ওই গ্রুপেই নিহত শাহাদাতকে পেটানোর আগে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঘোষণা দেওয়া হয় জানিয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র তারেক আজিজ বলেন, ‘ভিকটিমকে বেঁধে পেটানোর সময় চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপে ভিডিওটা দেওয়া হয়। তখন গ্রুপে বলা হয় একজনকে ধরা হয়েছে যিনি মোবাইল চোর বা ছিনতাইকারী। তাকে মারতে হবে সবাই আসেন। এরপর একে একে দলে দলে গিয়ে তাকে পেটানো হয়।’

‘গ্রুপটি ছাত্র জনতার নাম দিয়ে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল। সরকার পতনের পরে ট্রাফিকিংয়ের জন্য পুলিশের অনুমোদনকৃত কোনো ট্রাফিক গ্রুপ ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উদ্যোগী হয়ে অনেকে ট্রাফিকিংয়ে সহায়তা করেছে। কিন্তু তারা এই গ্রুপের সদস্য নয়।’— উল্লেখ করেন কাজী মো. তারেক আজিজ।

অ্যাডমিনসহ গ্রেপ্তার তিন, বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে

এ ঘটনায় ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ জুয়েল (৪২), মো. সালমান (১৬) এবং আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)। এদের মধ্যে কেবল ইফাতই ছাত্র। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরের ২ নম্বর গেট এবং শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘মূলত ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৩ আগস্ট। ঘটনার পর ভিকটিম শাহাদাতের লাশ তারা প্রবর্তক মোড় এলাকায় ফেলে রাখে। পরে পুলিশ দেখতে পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এর আগে, কয়েক দফায় গান গেয়ে গেয়ে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আসামিদের শনাক্তে কাজ শুরু করে এবং গতকাল টানা চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথকভাবে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

আসামিদের জিজ্ঞাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজনসহ আনুমানিক ২০ জনের অধিক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। পুলিশ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে, আসামিদের সাথে ভিকটিমের কোনো ধরনের পূর্ব পরিচয় ছিল না। ভিকটিমকে ছিনতাইকারী সন্দেহে মারধর করা হয়। এক দলের পর আরেক দল এসে এসে তাকে মারধর করে।’

এডিসি তারেক আজিজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপের এডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে সে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসা করে। আরেক আসামি যার বয়স ১৬, নাম সালমান। সে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু। সেও কিন্তু ছাত্র নয়। সে ঘুরেফিরে বেড়ায় মূলত। আর আনিসুর রহমান ইফাত নামে যাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি সে চান্দগাঁও এলাকার একটি কলেজের ছাত্র।’

সন্দেহ থেকেই হত্যাকাণ্ড, পরিবারের দাবি ভিত্তিহীন 

এদিকে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে নিহত শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তার দাবি করেন, লালখান বাজার এলাকার সাগর নামে এক যুবক গান গাইতে গাইতে পেটানোর পর তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে ভিডিও পাঠিয়েছিল এবং মুক্তিপণও দাবি করেছিল। পাওনা টাকা নিয়ে সাগরের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের আগে বিরোধ হয়। এর জের ধরে তাকে ডেকে নিয়ে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওতে সাগর আছে বলে শনাক্তও করেছিলেন তিনি।

তবে সাগরের বিষয়টি ভিন্ন এবং ভিত্তিহীন দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। অন্য কোনো কারণে সাগর ভিকটিমকে ডেকেছিল। আর টাকা চাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের সাথে এসবের সম্পর্ক নেই। ভিডিওতে সাগরের কোনোপ্রকার অস্তিত্ব দেখা যায়নি।’

‘ভিকটিম মূলত দিনমজুর। তার নির্দিষ্ট পেশা নেই। তাকে ওই এলাকায় দেখে সন্দেহের ভিত্তিতেই মারধর করা হয়। আপনারা একটি নাম শুনেছেন মব জাস্টিস নামে। কিন্তু এটি মব ইনজাস্টিস হতে পারে। শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতেই তাকে বেশ কয়েক দফায় মারধর করে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে।’ বলেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, ভিকটিম শাহাদাতের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় ৬টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চারটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা এবং আরেকটি চুরির অভিযোগে হয়েছে।

এর আগে, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক গোল হয়ে গাইছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’। কেউ মুখ দিয়ে বাজাচ্ছেন বাঁশি, কেউ করছেন উল্লাস। ঠিক তাদের মাঝখানেই নিল রঙের গেঞ্জি এবং জিন্স প্যান্ট পড়ে শাহাদার নিস্তেজ হয়ে ঢুলছেন। তার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সাথে। গান গেয়ে গেয়েই পিটিয়ে নৃশংস ও নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার। যার লাশ গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে রাস্তা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর ১৫ আগস্ট শাহাদাতের বাবা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে শাহাদাতের চাচা উল্লেখ করেন, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন...
© All rights reserved © 2024 nagoriknewsbd
Theme Customized By BreakingNews