৬ টির বাজেট নিয়ে ৪টি জাহাজ ক্রয়,বিএসসির ক্ষতি ৫শত কোটি টাকা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :বিএসসির সাবেক এমডি কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান- সালমান এফ রহমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে রয়েছে বড় অংকের দুর্নীতির অভিযোগ।
জানা যায়, বিএসসির সাবেক এমডি কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান ও সাবেক মন্ত্রী বন্দর খেকো সালমান এফ রহমানের জোগসাজোসে ৬ টির বাজেট নিয়ে ৪টি জাহাজ ক্রয় করে, এতে বিএসসির ক্ষতি প্রায় ৫শত কোটি টাকা। যা লোপাট করেছে বিএসসির সাবেক এমডি কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান- সালমান এফ রহমান।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন চায়না কোম্পানী সিএমসি থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট এর আওতায় ২৩৫ মিলিয়ন ডলারের ৬ টি জাহাজ ক্রয়ের জন্য উচ্চ সুদে ২.২% হারে ৮০ হাজার ক্যাপাসিটির বিডব্লিউটির ৩টি জাহাজ ও ১ লক্ষ ১৪ হাজার ক্যাপাসিটির ৩ টি ট্যাংকার সরবরাহের জন্য প্রপোজাল দেয় ২০২০ সালে।
পরবর্তীতে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২২ সালের তখনকার বাংলাদেশের শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এসএম মনিরুজ্জামান- সালমান এফ রহমান গংরা সুকৌশলে সরকার/মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করে সিএমসির সাথে গোপন আতাতের মাধ্যমে ২০২২ সালে এই ২৩৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েই ৪ টি জাহাজ ক্রয়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় হয়ে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠায়।
বিনা টেন্ডারে এই জাহাজগুলো সরাসরি সিএমসির কোম্পানী থেকে কেনা হয় এতে করে সরকারের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়।২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর ছুটির দিনে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে জাহাজ কেনার এই চুক্তি করেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে প্রচলিত বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে এসব জাহাজ কেনার চুক্তি হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বিএসসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথা জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চীনের বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি জাহাজের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সিএমসির জাহাজের দাম বেশি ধরা হয়েছে।
২০২৩ সালে সে দেশের কার্যাদেশ নেওয়া কয়েকটি জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি ৮০-৮২ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের দাম ৩ কোটি ২০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।এই দাম বাংলাদেশের ক্রয়াদেশ দেওয়া জাহাজগুলোর চেয়ে প্রায় এক কোটি ডলার কম।
আর ১ লাখ ১৪ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকারের (আফরাম্যাক্স) দাম অন্য কোম্পানিগুলো নেয় ৬ কোটি ১০ লাখ থেকে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।অর্থাৎ এই জাহাজেও প্রতিটিতে এক কোটি ডলার বেশি দাম ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম কিস্তির অর্থ পরিশোধ করা হলে চীনের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিএমসি জাহাজ নির্মাণ শুরু করবে।
এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।সব মিলিয়ে চারটি জাহাজ কিনতে দেশি মুদ্রায় খরচ হবে ২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। পাঁচ কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরুর বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ইআরডি তা শিগগিরই জানিয়ে দেবে।তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগের দরে জাহাজ মিলবে না।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন , জাহাজের ভাড়া এক দশমাংশ কমে যাওয়ায় নতুন জাহাজ সংগ্রহ করা খুবই অপ্রয়োজনীয়, এছাড়া বেসকারি খাতের অধীনে ৯৩ টি সমুদ্রগামী জাহাজ কাজ করছে এবং সরকারী বহরে চারটি জাহাজ যোগ করলেও কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
এই অর্থনীতিবিদ আরও পরামর্শ দিয়েছেন যে, চীন যদি এই মূল্যে জাহাজ বিক্রি করতে রাজি না হয় তবে কর্তৃপক্ষের উচিত চুক্তিটি বাতিল করা।
অভিযোগ রয়েছে,৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন দপ্তরে সক্রিয়,তারই ধারাবাহিকতায় এসএম মনিরুজ্জামানকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে করে সালমান এফ রহমান ও সাবের হোসেনের পুরনো এজেন্ডা গুলো সহজেই বাস্তবায়ন করা যায়। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।
Leave a Reply